বান্দরবানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নানা অসংগতী!


মোঃ শহীদুল ইসলাম রানা, বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালেয়র অধীন একটি অধিদপ্তর। দেশে অবৈধ মাদকের প্রবাহ রোধ, ঔষধ ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহার্য বৈধ মাদকের শুল্ক আদায় সাপেক্ষে আমদানি, পরিবহন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, মাদকদ্রব্যের সঠিক পরীক্ষণ, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণ, মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরোধ কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে নিবিড় কর্ম-সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা অধিদপ্তেরর প্রধান দায়িত্ব।

বর্তমান সরকারের দৃড় প্রত্যয় মাদক মুক্ত দেশ গড়ার এরই ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন জেলা সদর ও উপজেলায় মাদক দ্রব্য চোরাচালান রোধে কাজ করছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর এবং তাদেে সহযোগিতা করে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ।

সরজমিনে দেখা যায় বান্দরবান জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এর বর্তমান চলমান অবস্থা ও প্রশাষনিক কার্যক্রম পরিচালনা, মাঠ পর্যায়ে মাদকদ্রব্য চোরাচালান রোধ ও নিয়ন্ত্রণে আছে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা, জনবল সংকট,নিজস্ব যানবাহনের সমস্যা ও কোন কোন ক্ষেত্রে মাদক বিরোধি অভিযানে অধিদপ্তওে মহিলা সদশ্য না থাকার কারনে জেলার সরকারী এই সংস্থাটি কার্যত তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করছে ধীর গতীতে ।

একটি জেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অফিস ও মাট পর্যায়ের সার্বিক কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামোতে ১ জন উপ পরিচালক, ২জন সহকারী পরিচালক, ২জন উপ পরিদর্শক, ১ জন হিসাব রক্ষক, ৩ জন সহঃ উপ পরিদর্শক, ১ জন অফিস সহকারী, ১ জন গাড়ী চালক, ৯ জন সিপাহী, ১ জন ওয়ারলেস অপারেটার,১ জন অফিস সহায়ক, ১ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী সহ প্রসিকিউশন বিভাগের জন্য ১ জন প্রসিকিউটর ও ১ জন সহকারী প্রসিকিউটর থাকার কথা থাকলেও।

সরজমিনে দেখা গেছে এর ভিন্ন রূপ। বর্তমানে জেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরে ১ জন সহকারী পরিচালক এর তত্বাবধানে ১ জন উপ পরিদর্শক, ১ জন পরিদর্শক ও ৪ জন সহকারী উপ পরিদর্শক মোট জনবল সংখ্যা ৭ জন। বর্তমানে এই ৭ জন দিয়েই বান্দরবান জেলা সদর সহ ৭ টি উপজেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে ও চোরাচালান রোধে কাজ করছে সরকারী এই সংস্থাটি।

খোজ নিয়ে জানা গেছে বর্তমানে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালনার জন্য বরাদ্দকৃত গাড়িটি ব্যাবহার হচ্ছে টেকনাফ ও কক্সবাজার কার্যালয়ে এবং এই গাড়ি চালকের বেতন হতে শুরু করে যাবতীয় খরচ বহন করছে বান্দরবান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। মাঠ পর্যায়ে মাদকদ্রব্য চোরাচালান রোধ এবং অবৈধভাবে জেলার অভ্যন্তরে মাদক ব্যাবসা পরিচালনা রোধ কল্পে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে লজিস্টিক সহায়তার অভাবে।

অনেক ক্ষেত্রে অধিদপ্তরে মহিলা পরিদর্শক/ সহঃ উপ পরিদর্শক না থাকার দরুন অনেক ক্ষেত্রে মহিলা মাদক ব্যাবসায়ি চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত নারিদেরকে শাররীক তল্লাশির মাধ্যমে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করতে পারছে না এই সংস্থাটির কোন সদস্য। এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে পার্বত্য এলাকা হওয়ার কারণে আছে বিশেষ আইনি জটিলতা (যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন-২০১৮) ১১ ধারয় সুস্পস্ট ভাবে উল্লেখ আছে।সরজমিনে দেখা গেছে বিগত সময়ে অনেক মাদক ব্যাবসায়ির বিরুদ্ধে( মদ,গাজা,ইয়াবা) জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মামলা করে কিন্তু আসামীরা স্বল্প সময়ে জামীনে মুক্তি পাওয়ায় তারা পূনরায় একই অপরাধ করতে উদ্ধত হয়।

সুশিল সমাজের অনেকেই মনে করেন মাদক ব্যাবসায়িদের আইনি ফাকফোকড় দিয়ে দ্রুত সময়ে ছাড়া পাওয়ার কারণে তাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা কমে যায় যার কারণে তারা ছাড়া পাওয়ার পরেও আবার এলাকাতে মাদক ব্যাবসা পরিচালনার মত অসামাজিক অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তাছাড়া ১ টি জেলা হওয়া সর্তেও এখানে এখনো গড়ে উঠে নি কোন মাদক নিরাময় কেন্দ্র।

সংশ্লিস্টরা মনে করেন জেলায় একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা খুবই জরুরী।সেক্ষেত্রে বেসরকারী ভাবে কেউ যদি এগিয়ে আসে আমরা তাদেও সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবো।

বান্দরবান মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের বর্তমান অবস্থা ও মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন অসংগতির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান ও অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, বান্দরবান জেলায় আমাদের অধিদপ্তরের নানাবিধ অসংগতির ব্যাপারে আমরা অবগত আছি অচিরেই জেলার যে,জনবলের অসুবিধা তা সমাধানের ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে ।জেলার মাঠ পর্যায়ে যাতে আমাদের সদস্যগন অভিযান পরিচালনা করতে পারে সে জন্য আমরা ইতিমধ্যে বান্দরবান জেলার জন্য নতুন গাড়ি বরাদ্ধের ব্যাপারে রিকোজিশন দিয়েছি। যা আগামী ৬ মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে বলে আশা রাখি।

বর্তমানে যে গাড়িটি বান্দরবানের জন্য বরাদ্দ আছে তা এখন কক্সবাজার, টেকনাফ কার্যালয়ে ব্যাবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের বর্তমান অফিস প্রধান সহকারী পরিচালক মোঃ বাবুল সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদক কে বলেন, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আওতায় মোট ২৬ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও জেলার প্রধান কার্যালয়ে মোট ৭ জন জনবল দিয়েই আমাদের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে।

তবে অচিরেই আমাদের লোকবলের যে চাহিদা আছে তা পূরণ হবে। জেলা সদর হতে অন্যান্য উপজেলায় বিশেষ মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে যানবাহনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন আমাদের নিজস্ব কোন যানবাহনের ব্যবস্থা বর্তমানে নেই। যে একটি গাড়ী আমাদের জেলা অফিসের জন্য বরাদ্দ ছিলো তা টেকনাফ ও কক্সবাজার কর্তৃপক্ষ ব্যাবহার করছেন। জেলা সদর হতে অন্যান্য উপজেলায় বিশেষ মাদক বিরোধি অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে আমরা প্রয়োজনে ভাড়াকৃত গাড়ি বর্তমানে ব্যাবহার করে থাকি এবং এর যাবতীয় ব্যায় সরকারি ভাবেই বহন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, আমরা ইতি মধ্যেই আমাদের কর্মপরিকল্পনায় বান্দরবান জেলাকে মাদকমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষনা দেয়ার লক্ষে সেই ভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি।

মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সামাজিক কর্মকান্ডের ব্যাপারে তিনি প্রতিবেদক কে আরো জানান বান্দরবান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক কোভিড কালিন সময়ে আমরা অনেক জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম গ্রহন করেছি।আমরা ইতি মধ্যে বিভিন্ন স্কুল কলেজ এর ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মাদকের ভয়াবহতার ব্যাপারে, এর কুফল সম্পর্কে জানানোর ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছি।

সরজমিনের প্রতিবেদনে বান্দরবানের সুশিল সমাজের অনেক প্রতিনিধিই মনে করেন জেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং তাদের কাংঙ্খিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ি জেলাকে মাদক মুক্ত ঘোষনা করার জন্য প্রয়োজন আরো লজিস্টিক সাপোর্টের। সরকারী অথবা বেসরকারী উদ্যোগে গ্রহণের মাধ্যমে স্থাপন করা উচিত একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র।প্রয়োজনে পার্বত্য অঞ্চলের জন্য গ্রহণ করতে হবে আইনের সংশোধন। পাহাড়ের বুকে সম্প্রিতির এই বান্দরবান হোক মাদক মুক্ত, মাদকের হাতছানিতে যেনো তলিয়ে না যায় যুব শক্তি। সোনার বাংলা বিনির্মানে মাদক কে না বলার এখনি সময়।


আরও পড়ুন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.