পপসম্রাট আজম খানের জন্মদিন আজ


বাংলাদেশের পপ সংগীতের অন্যতম পথপ্রদর্শক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আজম খানের জন্মদিন আজ। ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনিতে জন্মগ্রহন করেন তিনি।

আজম খানের প্রকৃত নাম ছিল মাহবুবুল হক খান। ‘গুরু’ নয়, ‘আজম ভাই’ সম্বোধনটি পছন্দ করতেন তিনি। কিন্তু সবার ভালোবাসা তাকে ‘গুরু’ করে তুলেছিল। সেই গুরুর জন্মদিন কাটছে নিরবে-নিভৃতে।

আজম খান ৫ বছর বয়সে ভর্তি হন ঢাকেশ্বরী স্কুলে। ১৯৭০ সালে টি অ্যান্ড টি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের সময় ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণসংগীত প্রচারে অংশ নেন তিনি। এরপর ১৯৭১ সালে পাক হানাদারের বিরুদ্ধে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। কুমিল্লা ও ঢাকার আশেপাশে সেকশন কমান্ডার হিসেবে অনেকগুলো গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন তিনি।

দেশ স্বাধীন হলে ‘উচ্চারণ’ নামে একটি ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন আজম খান। দেশের সংগীত জগতে তখন দারুণ আলোড়ন তোলে ব্যান্ড দলটি। ১৯৭২ সালে তার ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ আর ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি বিটিভিতে প্রচার হয়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। পরে বিটিভিতে ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’ গান গেয়ে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিলেন।

পপ সম্রাটের প্রথম কনসার্ট প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনে ১৯৭২ সালে। সংগীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।

আজম খানের জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘একসিডেন্ট’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘পাপড়ি’, ‘বাধা দিও না’, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না’, ‘অনামিকা’, ‘আমি যারে চাইরে’ ইত্যাদি।

আজম খান ভালো সাঁতারু ছিলেন। নতুন সাঁতারুদেরকে মোশারফ হোসেন জাতীয় সুইমিং পুলে সপ্তাহে ৬ দিন সাঁতার শিখাতেন। ২০০৩ সালে তিনি গডফাদার নামক একটি বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেন। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে কাজ করেন।

আজম খান দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধির সাথে লড়াই করে ২০১১ সালের ৫ জুন ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয় তাঁকে।


আরও পড়ুন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.