চট্টগ্রামে ১৫টি দাবিতে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সংবাদ সম্মেলন
হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজায় ৪ দিনের সাধারণ ছুটিসহ ১৫ দফা দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আগামী ২০ অক্টোবর দূর্গাপূজা উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে -৭২’র সংবিধানের আলােকে সকল সম্প্রদায়ের সম-অধিকার নিশ্চিত করা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন এবং দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়নে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন, মঠ-মন্দির, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, লুটপাট, হামলা ভাঙচুরসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শাস্তির ব্যবস্থা করা, শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইন কার্যকর করে প্রকৃত ভূমি মালিকদের ফেরত দেয়া, সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড, পুলিশ প্রশাসন ও সচিবালয়সহ সকল সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিদের আনুপাতিকহারে নিয়োগ, সরকারি সংস্কৃত কলেজ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন, বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, সীতাকুণ্ডকে জাতীয় তীর্থস্থান ও ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে জাতীয় মন্দির হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাজনীতি ও নির্বাচনে ধর্ম এবং সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, চন্দ্রনাথ ধাম ও কক্সবাজার আদিনাথ মন্দিরে সরকারি সহায়তায় উন্নয়নের ব্যবস্থা, দক্ষিণ কাট্টলীর বারুণী স্নানের জন্য রানী রাসমনি ঘাটের ৫ একর জায়গা বরাদ্দ দেয়া, শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালীন সরকারি-বেসরকারি সকল স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা, সারাদেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে একটি করে মডেল মন্দির নির্মাণে ভূমি বরাদ্দ দেওয়া এবং চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় মঠ, মন্দির, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাটসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সমূহকে দ্রুত সংস্কার ও ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল।
এসময় লিখিত বক্তব্যে হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, বিগত দিনে সরকার ও রাজনৈতিক দলসমূহের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম যাতে সাম্প্রদায়িক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং তার আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। তারপরও আমরা লক্ষ্য করছি দেশের কিছু কিছু স্থানে মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও নির্যাতন চালিয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে জবরদখল, মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুরের মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা এখনো ঘটে চলেছে। এছাড়া দুর্গোৎসবের পরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সংখ্যালঘু আইন প্রণয়ন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন এবং দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। অতএব আগামীতেও এইসব প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমরা সন্ধিহান। আমরা প্রত্যাশা রাখি বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও বলিষ্ঠ ভূমিকায় এবারের শারদোৎসব সুষ্ঠু ও শান্তি-শৃঙ্খলার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। আমরা মনে করি সরকার ও প্রশাসনের সঠিক সিদ্ধান্তই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর সম্ভাব্য নির্যাতন, নিপীড়ন রোধ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে বাঙালির দুর্গোৎসবকে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংস্থা ইউনেস্কো তাদের অধরা সংস্কৃতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এখন বাঙালির এই দুর্গোৎসব একটি আন্তর্জাতিক উৎসবে রূপ নিয়েছে। এই বিশেষ স্বীকৃতির জন্য আমরা আনন্দিত। প্রতিবছরের মত এবারও মহানগরের জেএমসেন হলসহ ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত/ঘট পূজাসহ প্রায় ২৯৩টি পূজামণ্ডপ ১৯ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পাঁচদিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে। নগরীর সকল পূজা মন্ডপ ডিজেমুক্ত ও প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া পূজার আনুষ্ঠানিকতা রাত ১২টার মধ্যে শেষ করার জন্য পূজার আয়োজকদের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে এবং প্রতিমা বিসর্জন ২৪ অক্টোবর দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য ও অ্যাড. চন্দন কুমার তালুকদার।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গত ১ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ” আসন্ন দুর্গাপূজায় সরকার চাইলে হামলার ঘটনা ঘটবে না, না চাইলে ঘটবে, এটাই আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা” বলে মন্তব্য করার বিষয় জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, উনি কেন একথা বলেছেন তার উত্তর আমাদের কাছে জানা নেই, ওঠা উনি নিজেই ভালো জানবেন। বিষয়টি আপনারা ওনার কাছ থেকে জেনে নিলে ভালো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সাবেক সভাপতি সাধন ধর, বিমল কান্তি দে, অ্যাড. চন্দন তালুকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা অরবিন্দ পাল অরুন, সহ-সভাপতি অধ্যাপক অর্পণ কান্তি ব্যানার্জী, সুমন দেবনাথ, লায়ন দীলিপ ঘোষ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজিত দাশ, যুগ্ম সম্পাদক মিথুন মল্লিক, সজল দত্ত, অ্যাড. নটু কুমার চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন টুটুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক স্ট্যালিন দে, পূজা বিষয়ক সম্পাদক প্রিয়তোষ ঘোষ রতন, রাসেল দত্ত ও অয়ন ধর।