ভিক্ষুক হলেও সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত বানিয়েছে প্রতিবন্ধী আশরাফুল


কে এম রাজীব: শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড ছোটকাল থেকে গ্রন্থে জেনেছি। শুনেছি গোবরে পদ্মফুল ফোটার গল্প। আবার বাস্তব জীবনে দেখেছি অনেক ধনীর সন্তানদের কেউ কেউ অসৎসঙ্গের কারণে লেখা পড়া না করে পিতা মাতার অবাধ্য হতে। দেখেছি বাসার কাজের ভুয়ার, রিক্সা চালকের সন্তানদের কেউ কেউ ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা পুলিশের উধ্বর্তন কর্মকর্তা হতে। তেমনি দেখলাম নিজে শিক্ষিত না হলেও ভিক্ষা করে ৩ মেয়ে ১ ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত বানিয়েছেন এবং মেয়েদের বিয়ে দেন প্রতিবন্ধী আশরাফুল কবির (৬৫) নামের এক ব্যক্তি। আশরাফুল কবির যশোর সদর থানাধীন কচুয়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন কাজির দেউরী এলাকার কাজী পাড়ার একটি বাসায় বসবাস করেন।

আশরাফুল কবির ১৯৫৯ সালে যশোরের কচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শিক্ষা জীবন প্রাথমিক পাড় হয়ে মাধ্যমিকে পদার্পণ করলেও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন তার লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যায়। আশরাফুল প্রতিবন্ধী হয়েও যুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে দেশ স্বাধীনের আশায় ছুটে ছিলেন এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। নিজে মুক্তিযোদ্ধা হতে না পারলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন প্রতিবন্ধী আশরাফুল কবির। ভিক্ষা করে জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৩ মেয়ে ১ ছেলেকে শিক্ষিত এবং মেয়েদের বিয়ের বিষয় জানতে চাইলে আশরাফুল বলেন, আমি হাই স্কুলে উঠার পর দেশে যুদ্ধ শুরু হয়। বন্ধ হয়ে যায় লেখা পড়া। আমি জন্ম সূত্রে প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী হয়েও যুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে থেকে দেখেছি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন। দেখেছি বাঙ্গালীর উপর পাকিস্তানীদের পাশবিক নির্যাতন। দেখেছি লাশের উপরে লাশ আর রক্তের বন্যা।আমি নিজে মুক্তিযোদ্ধা না হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতে পেরে আমি গর্বিত।

তিনি বলেন, যুদ্ধের পর আমার আর লেখা পড়া হয়নি। মনে কষ্ট রয়ে গেল লেখা পড়া করতে না পেড়ে। অভাবের সংসার কাজ নিলাম হোটেলে। এর পর বিয়ে, বিয়ের পর সংসার জীবন শুরু। সংসার জীবনে আমার ঘরে জন্ম নেয় আমার বড় মেয়ে আরিফা, তার পর মেঝো মেয়ে মারুফা, তার পর তৈয়বা, সর্বশেষ ছোট ছেলে আরিফুল ইসলাম। ভাবলাম নিজে লেখা পড়া করতে পারি নাই, দেখি ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া শিখিয়ে শিক্ষিত বানাতে পারি কি না। শুরু হয় তাদের শিক্ষা জীবন নিয়ে যুদ্ধ। তাদের লেখা পড়ার খরচ যোগাড় করতে হোটেলর কাজ ছেড়ে ভিক্ষা পেশায় নেমে পড়ি। এর পর আল্লাহর রহমতে ৪ ছেলে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত পিতা মনে করি। বর্তমানে তিন মেয়ে স্বামীর ঘরে খুব সুখে শান্তিতে আছে। এখন শুধু আমার একটি চিন্তা, ছোট মেয়ের বিয়ের সময় বিয়ের খরচ যোগাড় করতে পৈতৃক ভিটাটা কৃষি ব্যাংককে ১ লক্ষ টাকায় বন্ধক রেখেছিলাম যার প্রতি মাসে সুদ দিতে হচ্ছে। যদি ১ লক্ষ টাকা যোগাড় করে ভিটাটা ছাড়িয়ে আনতে পারি, তাহলে আমার একটি মাত্র ছেলে আরিফের জন্য রেখে যেতে পারবো। এর পর ভিক্ষা পেশা ছেড়ে যদি আল্লাহ হায়াত রাখেন বাকি সময় বাড়িতে বসে বসে কাটাবো।


আরও পড়ুন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.