মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপসহ ৭ আসামীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত


কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ আসামির মধ্যে ৭ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

৬ আগস্ট বিকেলে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতের বিচারক এ নির্দেশ দেন। র‌্যাব সিনহা হত্যা মামলা তদন্তের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাকারিয়া ও রাখাল চন্দ্র মিত্র জানান, মামলার ৮ নম্বর আসামী এসআই টুটুল ও ৯ নম্বর আসামী কনস্টেবল মো. মোস্থফা নামে কোনো পুলিশ সদস্য জেলা পুলিশে নেই।

মেজর (অব.) সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি প্রত্যাহারকৃত টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া উপ-পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ সাত আসামী আত্মসমর্পণ করলেও দুই আসামী আত্মসমর্পণ করেনি।

এই দুই আসামী হলেন প্রত্যাহার হওয়া উপ-পরিদর্শক টুটুল ও কনস্টেবল মোস্তফা। কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

এর আগে কড়া নিরাপত্তায় ওসি প্রদীপকে চট্টগ্রাম থেকে পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে কক্সবাজার আদালতে নেয়া হয়। আর লিয়াকতসহ অন্য ৮ আসামিকে জেলা পুলিশ লাইন্স থেকে কক্সবাজার আদালতে আনা হয়। পরে বিকেলে ৮ আসামি ও প্রদীপকে সরাসরি আদালতে নেয়া হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদেরকে আদালতের এজলাসে তোলা হয়।

জানা গেছে, টেকনাফ থানার ওসি (প্রত্যাহার) প্রদীপ কুমার দাস গত ৪ আগস্ট থেকে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটিতে ছিলেন। এছাড়া অন্য ৮ আসামি পুলিশ লাইনেই নিরাপত্তা হেফাজতে ছিলেন। এ ঘটনায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত ৯ পুলিশ সদস্যসহ ২০ জনকে প্রত্যাহার করেছে কর্তৃপক্ষ। ৫ আগস্ট প্রত্যাহার করা হয় প্রদীপ কুমার দাশকে।

ঘটনা তদন্তে গত ২ আগস্ট চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। ৪ আগষ্ট থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে।

এর ঘটনার বিচার চেয়ে টেকনাফ উপজেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারহার আদালতে ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে মামলা করেন তার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ মামলাটি গ্রহণ করেন। তিনি এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে ৭ দিনের মধ্যে আদালতকে অবহিত করতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মামলাটি তদন্ত করে আদালতকে জানানোর জন্য র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ক্যাম্পের অধিনায়ককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন, ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও আইসি লিয়াকত আলী, এসআই নন্দলাল রক্ষিত, এসআই টুটুল, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও কনস্টেবল মো. মোস্তফাকে আসামি করা হয়েছে।

গত ৩১ জুলাই ঈদের আগের রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে গুলিতে নিহত হন সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান (৩৬)। তার গাড়িতে থাকা তার সঙ্গী সিফাতের ভাষ্যমতে, সিনহাকে কোনোরূপ জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই চেকপোষ্টে গাড়ি থেকে নামতে বলে চার রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে হত্যা করেন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই লিয়াকত আলী। ৫ আগষ্ট দুপুরে এ ঘটনায় কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন মেজর সিনহার বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। মামলাটির শুনানিতে সন্তুষ্ট হয়ে তা ‘ট্রিট ফর এফায়ার’ হিসেবে আমলে নিতে টেকনাফ থানাকে আদেশ দেন আদালতের বিচারক।

আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানায় মামলাটি রুজু হয়। দ-বিধি ৩০২, ২০১ ও ৩৪ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। ৫ আগষ্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফ থানায় মামলাটি রুজু করা হয়। যার মামলা নম্বর সিআর ৯৪/২০২০ইং/টেকনাফ।


আরও পড়ুন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.